সেভেন সিস্টারস: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক!

🇱🇷This post discusses main topic in detail. Discover the benefits, uses, and important insights about main keyword👉 

ALT TEXT
 





🌄 সেভেন সিস্টারস: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক

দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে সুন্দর, পাহাড়ঘেরা অঞ্চলটি দেখা যায়, সেটিই “সেভেন সিস্টারস” নামে পরিচিত। ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জাতিগত বৈচিত্র্যে ভরপুর এই অঞ্চল ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় ও সংবেদনশীল অংশ। যদিও অনেকে প্রশ্ন করেন — এই অঞ্চলটি কি একসময় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) অংশ ছিল? ইতিহাস বলছে, বিষয়টি তার চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও জটিল।

🗺️ সেভেন সিস্টারস কারা?

“Seven Sisters” বলতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে বোঝানো হয়। এগুলো হলো:

1. আসাম (Assam)

2. অরুণাচল প্রদেশ (Arunachal Pradesh)

3. মণিপুর (Manipur)

4. মেঘালয় (Meghalaya)

5. মিজোরাম (Mizoram)

6. নাগাল্যান্ড (Nagaland)

7. ত্রিপুরা (Tripura)

অনেকে এখন অষ্টম হিসেবে সিকিম (Sikkim)-কেও অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে ঐতিহাসিকভাবে এটি “সেভেন সিস্টারস”-এর অংশ নয়।

🔹 প্রাচীন ও উপনিবেশ-পূর্ব ইতিহাস

এই অঞ্চল একসময় ছিল পাহাড়ি উপজাতি ও স্বতন্ত্র রাজন্যবংশের অধীনে।

আসাম ছিল আহোম রাজবংশের শক্তিশালী রাজ্য, যাদের শাসন প্রায় ৬০০ বছর স্থায়ী ছিল।

ত্রিপুরা ও মণিপুর ছিল পৃথক রাজ্য, যেখানে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজবংশের ঐতিহ্য টিকে ছিল।

নাগা, মিজো, গারো, খাসি প্রভৃতি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ পাহাড়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করত।

তখন এই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল, তবে রাজনৈতিকভাবে তারা স্বাধীন ছিল।

🔹 ব্রিটিশ শাসনের সূচনা

১৮২৬ সালে ইয়ানডাবো চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার)-এর কাছ থেকে আসাম অঞ্চল দখল করে নেয়। এরপর ধীরে ধীরে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে তারা ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসে।

এই সময়ে আসাম ও এর আশেপাশের কিছু এলাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি (Bengal Presidency)-এর অধীনে শাসিত হতো। অর্থাৎ প্রশাসনিকভাবে এই অঞ্চল তখন বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) প্রশাসনিক পরিধির অংশ ছিল।

তবে এটাকে “বাংলাদেশের অংশ” বলা যায় না, কারণ তখন বাংলাদেশ নামে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না; বরং সমগ্র এলাকা ছিল ব্রিটিশ ভারতের উপনিবেশ।

🔹 ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও প্রভাব

লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করেন, যার ফলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম মিলে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়—
👉 “Eastern Bengal and Assam”।

এর রাজধানী ছিল ঢাকা।
এই সময়ই অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, সেভেন সিস্টারস অঞ্চলের কিছু অংশ প্রশাসনিকভাবে “পূর্ববঙ্গ ও আসাম” প্রদেশের অংশ হিসেবে যুক্ত ছিল।
তবে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ বাতিল হয়ে গেলে আসাম আবার আলাদা প্রদেশে পরিণত হয়।

🔹 ১৯৪৭ সালের দেশভাগ

দেশভাগের সময় উত্তর-পূর্ব ভারতের সিংহভাগ অঞ্চল ভারতের অধীনে থেকে যায়।
তবে সিলেট জেলা, যা আসামের অংশ ছিল, সেখানে গণভোট হয়।
এই ভোটে সিলেটের বড় অংশ পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) যুক্ত হয়, আর ছোট অংশ আসামে থেকে যায়।

ফলে দেশভাগের পর “সেভেন সিস্টারস” পুরোপুরি ভারতের অধীনে থাকে, আর বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) আলাদা রাষ্ট্র হয়ে যায়।

🔹 স্বাধীন ভারতের প্রশাসনিক গঠন

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলকে ছোট ছোট রাজ্যে ভাগ করা হয়, যাতে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা বজায় থাকে।

সাল    নতুন রাজ্যের নাম    পূর্বে যেখান থেকে পৃথক

1963    নাগাল্যান্ড    আসাম থেকে
1972    মেঘালয়    আসাম থেকে
1972    মণিপুর ও ত্রিপুরা    কেন্দ্রশাসিত থেকে পূর্ণ রাজ্য
1987    মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ    পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়

🔹 ভৌগোলিক অবস্থান ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক

সেভেন সিস্টারস অঞ্চল বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত।
বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে আছে ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম ও মিজোরাম রাজ্য।

বাংলাদেশের সাথে এই অঞ্চলগুলোর সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও জাতিগত মিল লক্ষ্য করা যায়।
যেমন:

সিলেটের গারো জনগোষ্ঠী মেঘালয়ের গারোদের সঙ্গে সম্পর্কিত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা ও মিজোরামের চাকমা জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সরাসরি আত্মীয়তা রয়েছে।

ত্রিপুরার অনেক মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন, কারণ তাদের পূর্বপুরুষরা পূর্ববঙ্গ থেকে গিয়েছিলেন।

আজও বাংলাদেশের সাথে এই রাজ্যগুলোর বাণিজ্য ও সীমান্ত যোগাযোগ (যেমন আগরতলা–আখাউড়া করিডোর) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

🔹 কেন বলা হয় “সেভেন সিস্টারস”?

১৯৭২ সালে সাংবাদিক জ্যোতি প্রকাশ আগরওয়াল প্রথম এই সাত রাজ্যকে “Seven Sisters” বলে উল্লেখ করেন।
কারণ — এরা ভৌগোলিকভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল, সাংস্কৃতিকভাবে সংযুক্ত, কিন্তু ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অঞ্চল।

তাদের সাথে ভারতের মূলভূমির সংযোগ রয়েছে মাত্র একটি সরু পথ দিয়ে —
👉 “সিলিগুড়ি করিডোর” বা “চিকেনস নেক” নামে পরিচিত ওই অংশ দিয়ে।

🔹 বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব

বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তজুড়ে অবস্থিত এই সাত রাজ্য শুধু প্রতিবেশী নয়, বরং অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পণ্য বাংলাদেশ হয়ে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য ও পর্যটনের সম্ভাবনা বিপুল।

জলবায়ু, ভাষা ও সংস্কৃতির মিল থাকার কারণে যোগাযোগ আরও সহজ হতে পারে।

🌿 উপসংহার

“সেভেন সিস্টারস” অঞ্চল কখনো বাংলাদেশের অংশ ছিল না, তবে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলার প্রশাসনিক প্রভাব ও সাংস্কৃতিক সংযোগ এই অঞ্চলের সঙ্গে ছিল। আজ তারা ভারতের অংশ হলেও ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ তাদের নিকটতম প্রতিবেশী, এবং দুই অঞ্চলের মানুষ এখনও সংস্কৃতি, ভাষা ও সম্পর্কের বন্ধনে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

এই সাতটি রাজ্য যেন একে অপরের বোন, আর বাংলাদেশ তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী —
🌾 ইতিহাসে যেমন, ভবিষ্যতেও তেমনি। 

Post a Comment

0 Comments