Alt text
👉
টাইটেল: 🌿 সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য — ইসলাম ও হাদীসের আলোকে 🌿
ভূমিকা:
একটি শিশুর জন্ম শুধুমাত্র পারিবারিক সুখের উৎস নয়, বরং এটি একটি পবিত্র দায়িত্বের সূচনা। আল্লাহ তায়ালা সন্তানকে পিতামাতার জন্য একটি “আমানত” হিসেবে দিয়েছেন—যার সঠিক যত্ন, লালনপালন ও ইসলামি শিক্ষায় বড় করে তোলা পিতামাতার উপর ফরজ দায়িত্ব। ইসলাম শুধু সন্তানকে দুনিয়ার জীবনের প্রস্তুতি দিতে বলে না, বরং তাদের আখিরাতের মুক্তির পথেও পরিচালিত করতে বলে। তাই সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়টি ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
🌸 ১. সন্তান আল্লাহর আমানত
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
> “তোমাদের সম্পদ ও সন্তানরা শুধু পরীক্ষার উপকরণ।”
(সূরা আত-তাগাবুন: ১৫)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে যে সন্তান কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, বরং আল্লাহর দেয়া একটি পরীক্ষা। পিতামাতা যদি সন্তানের যথাযথ হক আদায় করেন, তবে তারা সওয়াব অর্জন করবেন। আর অবহেলা করলে তার জবাবদিহি করতে হবে কিয়ামতের ময়দানে।
🌿 ২. সুন্দর নাম ও আদব শেখানো
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
> “তোমরা তোমাদের সন্তানদের সুন্দর নাম রাখো, কারণ তোমরা কিয়ামতের দিন তাদের নাম দিয়েই আহ্বান করা হবে।”
(আবু দাউদ, হাদীস: ৪৯৪৮)
সন্তান জন্মের পর প্রথম দায়িত্ব হলো তার সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা। নামের মাধ্যমে শিশুর আত্মপরিচয় ও মানসিক বিকাশের শুরু হয়। পাশাপাশি ইসলামি আদব, সালাম, দোয়া, সত্যবাদিতা ও অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই দেওয়া উচিত।
🌼 ৩. ধর্মীয় শিক্ষা ও নামাজে অভ্যস্ত করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
> “তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও এবং দশ বছর হলে নামাজ না পড়লে শাস্তি দাও।”
(আবু দাউদ, হাদীস: ৪৯৫)
ইসলামে ধর্মীয় শিক্ষা শুধুমাত্র মাদ্রাসায় পাঠানো নয়, বরং ঘর থেকেই শুরু হয়। বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের সামনে নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা এবং ইসলামি জীবনযাপনের উদাহরণ তৈরি করা। যখন সন্তান পিতামাতার জীবনে আল্লাহভীতি ও আমল দেখতে পায়, তখন তার হৃদয়ে ধর্মের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়।
🌻 ৪. ন্যায্য ভরণপোষণ ও শিক্ষা নিশ্চিত করা
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
> “মা-বাবার উপর সন্তানের জন্য খাদ্য ও বস্ত্রের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা ফরজ।”
(সূরা আল-বাকারা: ২৩৩)
সন্তানের শারীরিক প্রয়োজন যেমন খাবার, পোশাক, আশ্রয়—সব কিছুই পিতামাতার কর্তব্য। একইসাথে সন্তানকে সুশিক্ষা দেওয়া, ভালো পরিবেশে বড় করা এবং নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া ইসলামি দায়িত্ব। শিক্ষা শুধু দুনিয়ার নয়, দ্বীনের জ্ঞানও এর অন্তর্ভুক্ত।
🌷 ৫. ন্যায় ও ভালোবাসার সঙ্গে আচরণ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
> “সন্তানদের মাঝে ন্যায্যতা অবলম্বন করো। যদি এক সন্তানকে কিছু দাও, অন্যকেও দাও।”
(বুখারী ও মুসলিম)
ইসলামে পক্ষপাতিত্ব কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পিতামাতার ভালোবাসা, যত্ন ও মনোযোগ সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে। অন্যথায় তাদের মনে হিংসা, অবহেলা ও বিদ্বেষের জন্ম হতে পারে, যা পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।
🌹 ৬. নৈতিক ও চরিত্র গঠনের দায়িত্ব
ইসলাম সন্তানের চরিত্র গঠনে পিতামাতাকে মূল দায়িত্বশীল হিসেবে ঘোষণা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
> “তোমাদের প্রত্যেকেই একজন রাখাল, এবং প্রত্যেকেই তার অধীনদের জন্য দায়ী।”
(সহিহ বুখারী, হাদীস: ৮৯৩)
এই হাদীসটি নির্দেশ করে, সন্তানকে সৎ, নম্র, বিশ্বস্ত, আমানতদার ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা পিতামাতার অন্যতম ফরজ দায়িত্ব। আজকের সমাজে এই দায়িত্ব পালন করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
🌿 ৭. হারাম থেকে দূরে রাখার নির্দেশ
সন্তানকে হারাম আয়ের খাবার খাওয়ানো বা অন্যায় পথে চালিত করা ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
> “যে শরীর হারাম খাদ্যে গঠিত, জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান।”
(তিরমিজি, হাদীস: ৬১৪)
তাই পিতামাতার উচিত নিজের জীবিকা হালাল পথে অর্জন করা এবং সন্তানকে হারাম থেকে দূরে রাখার শিক্ষা দেওয়া।
🌸 ৮. ভালোবাসা ও সহানুভূতির পরিবেশ
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে অত্যন্ত কোমল ব্যবহার করতেন। একবার এক ব্যক্তি বললেন, “আমি আমার সন্তানকে কখনো চুমু দিইনি।” রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বললেন—
> “যে দয়ামায়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।”
(বুখারী, হাদীস: ৫৯৯৭)
অতএব, সন্তানকে শাসনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালোবাসা ও দয়ার পরিবেশ। এতে তারা আত্মবিশ্বাসী, সৎ ও পরোপকারী মানুষ হয়ে ওঠে।
🌼 ৯. সন্তানের জন্য দোয়া করা
কুরআনে পিতামাতার দোয়া বারবার এসেছে—
> “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের চোখের শীতলতা দান করো, এবং আমাদের মুত্তাকীদের নেতা বানাও।”
(সূরা আল-ফুরকান: ৭৪)
দোয়া পিতামাতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সন্তান যদি সঠিক পথে থাকে, তাতে যেমন দুনিয়ার শান্তি, তেমনি আখিরাতের সফলতাও নিহিত।
🌿 ১০. সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে দায়িত্বের রূপান্তর
যখন সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখনও পিতামাতার দায়িত্ব শেষ হয় না। বরং তখন তাদের জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা, বিবাহে সহায়তা, ও জীবনের সিদ্ধান্তে পরামর্শ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
🌺 উপসংহার
ইসলামে সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব কেবল শারীরিক যত্নে সীমাবদ্ধ নয়—বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আত্মিক দায়িত্ব। সন্তান হলো এমন এক বাগান, যেখানে পিতামাতার যত্ন, শিক্ষা, ভালোবাসা ও দোয়ার বীজ রোপণ করা হয়। সেই বীজই একদিন ফল দেয় সমাজে, উম্মাহতে ও মানবতার সেবায়।
অতএব, একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত—
সন্তানদের শুধু ভালো নাগরিক নয়, বরং আল্লাহভীরু মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। এটাই ইসলামি দায়িত্ব ও আখিরাতের মুক্তির সোপান। 🌸

0 Comments
Emoji🌐 newsbd1964 – নির্ভরযোগ্য খবর ও তথ্যের ভরসাস্থল
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সত্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এই বাস্তবতায় newsbd1964 গড়ে উঠেছে এক বিশ্বাসযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে, যেখানে পাঠক পান বাংলাদেশ ও বিশ্বের সাম্প্রতিক খবর, সমাজ, শিক্ষা, ইতিহাস ও জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে যাচাই করা তথ্য ও বিশ্লেষণ।
আমাদের লক্ষ্য একটাই—পাঠকদের সামনে সত্য তুলে ধরা, কিন্তু সংবেদনশীলতা ও মানবিকতা বজায় রেখে। আমরা বিশ্বাস করি, সচেতন নাগরিকই সমাজের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাই newsbd1964 কেবল খবর প্রকাশ করে না; বরং প্রতিটি বিষয়ের পেছনের বাস্তবতা ও প্রভাব বিশ্লেষণ করে পাঠকদের চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়।
সমাজ বিষয়ক রিপোর্টে আমরা তুলে ধরি মানুষের জীবনের বাস্তব চিত্র, তাদের সাফল্য ও সংগ্রামের গল্প। শিক্ষা বিভাগে থাকে নতুন প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা, পরীক্ষার আপডেট, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের খবর। ইতিহাস বিভাগে পাঠকরা খুঁজে পান অতীতের অজানা অধ্যায়—যা বর্তমানকে বুঝতে সাহায্য করে। আর জীবনধারা বিভাগে থাকে স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, সম্পর্ক, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের নানা টিপস, যা প্রতিদিনের জীবনকে আরও সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে।
আমরা খবর সংগ্রহ করি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এবং প্রকাশের আগে যাচাই করি তথ্যের সত্যতা। গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে দূরে থেকে newsbd1964 সবসময় দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রতিশ্রুতি পালন করে।
বর্তমান যুগে যখন অনেক ওয়েবসাইট ক্লিক ও ভিউয়ের প্রতিযোগিতায় সত্যকে আড়াল করে, তখন newsbd1964 দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে—বিশ্বাসই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই আমাদের প্রতিটি প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ ও ফিচার লেখার পেছনে থাকে একটি উদ্দেশ্য—পাঠক যেন সত্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, এবং সেটি যেন সহজ ভাষায় সবার কাছে পৌঁছে যায়।
আপনি যদি জানতে চান বাংলাদেশ ও বিশ্বের সাম্প্রতিক খবর, সমাজের চলমান প্রবণতা, শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন দিকনির্দেশনা, কিংবা অতীতের ইতিহাস ও জীবনধারার বাস্তব অভিজ্ঞতা—তাহলে newsbd1964 হবে আপনার প্রতিদিনের জ্ঞানের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।